করোনা ভাইরাস মানব জাতির জন্য কেবল আযাব হিসাবে নয়, বরং ইতিমধ্যে রহমত হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে চীনের বায়ুদূষণ কমে গেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, চীনের অত্যাধিক ভাইরাস সংক্রমিত এলাকাগুলোয় কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমে গেছে আশ্চর্যজনক হারে। সাধারণত কারখানা ও গাড়ির ধোঁয়া থেকেই বিষাক্ত এ গ্যাস নির্গত হয়। করোনা সংক্রমণের কারণে চীনের সিংহভাগ কলকারখানা বন্ধ, বেশকিছু শহরে গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ হওয়ায় এর সুপ্রভাব পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশে।
বিশ্বের শীর্ষ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ চীনে গত দুই মাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ২৫ শতাংশ কমে গেছে বলে এক গবেষণায় জানিয়েছে ব্রিটিশ ভিত্তিক থিংকট্যাংক কার্বন ব্রিফ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০০৮-০৯ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর প্রথমবারের মতো কার্বন নির্গমন হ্রাসের মাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। ফলে এটি আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কার্যকরী পদক্ষেপগুলোই পরিবেশের জন্য এ উপহার বয়ে নিয়ে আসছে (দৈনিক ইনকিলাব ১৪.০৩.২০২০)। ফলে আবহাওয়া দূষণের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ব্যাপী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও বিশ্বনেতাদের বৈঠকের পর বৈঠকের পরও যা সম্ভব হয়নি, করোনার এক ধাক্কায় অল্প দিনেই তা সহজে সম্ভব হয়েছে। ফালিল্লাহিল হামদ।
এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যদি তোমরা কোন স্থানে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে বলে শুনতে পাও, তাহ’লে সেখানে যেয়ো না। আর নিজ এলাকা আক্রান্ত হলে সেখান থেকে বের হয়ো না’ (বুখারী হা/৫৭২৮)। খলীফা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর সময়ে ১৮ হিজরী তথা ৬৪২ খৃষ্টাব্দে একবার সিরিয়া ও ফিলিস্তীন সহ পুরা ইরাক জুড়ে মহামারী দেখা দেয়। অতঃপর সেটা উঠে যায়। তখন খলীফা সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। কিন্তু সিরিয়ার সীমান্তে ‘সারগ’ নামক স্থানে পৌঁছার পর মহামারী পুনরায় বৃদ্ধির সংবাদ পেয়ে সেখান থেকে ফিরে আসেন (বুখারী হা/৫৭২৯; ফাৎহুল বারী)।
একবার রাসূল (ছাঃ)-কে মহামারী সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটি হ’ল আযাব। যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে চান তার উপর প্রেরণ করেন। আল্লাহ এটিকে মুমিনদের জন্য রহমত স্বরূপ করেছেন। যদি কোন ব্যক্তি মহামারী এলাকায় ধৈর্যের সাথে ও ছওয়াবের আশায় অবস্থান করে এবং তার হৃদয়ে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, আল্লাহ যা তাকদীরে লিখে রেখেছেন তাই হবে, তাহ’লে ঐ ব্যক্তি একজন শহীদের ন্যায় ছওয়াব পাবে’ (বুখারী হা/৩৪৭৪)। তিনি বলেন, ‘আমার উম্মতের যে ব্যক্তি মহামারীতে মৃত্যুবরণ করল সে ব্যক্তি শহীদ’ (মুসলিম হা/১৯১৫)। বস্ত্ততঃ কোন রোগ ছোঁয়াচে হ’লেও আল্লাহর হুকুম ছাড়া তা কার্যকর হয়না। সংক্রমিত উটের দ্বারা অন্য উট সংক্রমিত হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হ’লে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তাহ’লে প্রথম উটটিকে সংক্রমিত করল কে? (বুখারী হা/৫৭১৭)। আল্লাহ এ পরীক্ষা কেন করেন? তিনি বলেন, ‘আর আমরা অবশ্যই তাদেরকে ছোট-খাট শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাব বড় শাস্তির পূর্বে। যাতে তারা আমার দিকে ফিরে আসে’ (সাজদাহ ৩২/২১)।
অতএব করোনার ব্যাপারে আতঙ্কিত না হয়ে যথাযথ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। সেই সাথে অপরিহার্য কর্তব্য হ’ল সকল পাপ থেকে তওবা করা। বিনীতভাবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা এবং তাঁর রহমতের উপর ভরসা করা। আল্লাহ আমাদের থেকে এই আযাব উঠিয়ে নিন -আমীন!
– প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব